নারিকেল তেল সারা বিশ্বে পরিচিত একটি তেল। এটি দু’ভাবে ব্যবহার করা হয়। যেটি রিফাইন্ড হয়ে আসে, সেটি বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য। আর যেটি আনরিফাইন্ড বা ভার্জিন তেল হিসেবে থাকে সেটি খাবার তেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে সাধারণত বাহ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয় নারিকেল তেল মানে যেটি রিফাইন্ড হয়ে আসে। তবে বাহ্যিকভাবে আনরিফাইন্ড বা ভার্জিন তেলের ব্যবহার ইদানিং বেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। চলুন আজকে জেনে নিই এই নারিকেল তেলের বেশ কিছু গুণ।
ত্বকে নারিকেল তেলের কার্যকারিতা
১। নারিকেল তেল ত্বকে ব্লিচ ও ক্লিনজারের কাজ করে। নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করলে ত্বকে ব্রনের সমস্যা দূর হবে এবং ব্রনের দাগ ও ক্ষত ম্লান হবে। ত্বক নমনীয় করতে নারিকেলের তেল বেশ জরুরি এবং র্যাশের সমস্যা সমাধানেও নারকেল তেল খুবই উপকারী। ত্বকের কালো ছোপ ছোপ দাগ থাকলে সেসব জায়গায় নারিকেল তেল দিয়ে নিয়মিত ম্যাসাজ করলে দাগটি হালকা হয়ে যায়।
২। নারিকেল তেল প্রাকৃতিক আন্ডার আই ক্রিমের কাজ করে। নারিকেল তেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে জমিয়ে প্রতিদিন রাতে শোবার আগে চোখের নিচে লাগালে কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
৩। ফেটে যাওয়া ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৪। নিয়মিত নারকেল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বকের পানিশূন্যতা দূর হয়।
৫। ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায়ও নারিকেল তেলে বেশ উপকারি।
৬। চেহারায় বয়সের ছাপ দূর করে নারিকেল তেল।
৭। রাত্রিকালীন ফেশিয়াল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৮। গোসলের আগে সমপরিমাণ নারিকেল তেল ও চিনি মিশিয়ে শরীরে ঘষা যায়। এটি একটি স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে শীতকালে এটি খুবই উপকার করে ।
৯। কোন স্থান হালকা পুড়ে গেলে তাতে অনেকক্ষণ পানি দিয়ে ধুয়ে নারিকেল তেল লাগালে জ্বালা পোড়া কম হয়।
১০। শিশুদের শরীর মালিশের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
১১। থালাবাসন মাজার পর একটু নারিকেল তেল হাতে নিয়ে ঘষলে হাত খসখসে হয় না। হাতের তালু নরম হয়।
১২। যাদের হাতের কনুই খসখসে ও শুকনো, তারা এই তেল কনুই-এ ঘষলে উপকার পাবেন।
চুলে নারিকেল তেলের ব্যাবহার –
নারকেল তেলে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে, এছাড়া এতে লুরিক অ্যাসিড এবং ফ্যাটিঅ্যাসিড বর্তমান।এছাড়া ভিটামিন, মিনারেলস এবং অন্যান্য নিউট্রিএন্টস প্রচুর পরিমানে বর্তমান।এই কারণে এই তেল একই সাথে চুল পড়া কমায়,চুলের গ্রোথ বাড়িয়ে তোলে এবং চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহৃত ।চুলের যে কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে নির্ভয়ে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।ঠিক কি ভাবে নারকেল তেল সাহায্য করে চুলের যত্ন নিতে আসুন জেনে নেওয়া যাক-
১.চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার –
রুক্ষ,ফ্রিজি,ক্ষয়ে যাওয়া চুল সবথেকে বেশি তাড়াতাড়ি ঝরে যায়।আর চুল রুক্ষ হওয়ার কারণ হলো চুলের নমনীয়তা কমে যাওয়া।চুলের গোড়ায় পুষ্টি না পৌছলে চুল খুব তাড়াতাড়ি রুক্ষ হয়ে যায়।তাই আপনার যদি রুক্ষ চুলের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নারকেল তেল ব্যবহার করুন চুলের রুক্ষতা দূর করতে।নারকেল তেলে ভিটামিন এবং ওমেগা ফ্যাটি-অ্যাসিড বর্তমান যা আমাদের চুলের গোড়ায় পুষ্টি দান করে এবং আমাদের চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
পদ্ধতি
সপ্তাহে অন্তত ২ দিন চুলে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করুন।একটি পাত্রে নারকেল তেল নিয়ে গরম করে নিন।এবার এই উষ্ণ নারকেল তেল ভালো করে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন।ম্যাসাজ করা হয়ে গেলে হেয়ার ব্রাশ দিয়ে ভালো করে চুল আঁচড়ে নিন।এতে নারকেল তেল আপনার মাথা্র ত্বকেএবং চুলের গোড়ায় ভালো করে ছড়িয়ে পড়বে।৩০-৩৫ মিনিট পর মাথায় শ্যাম্পু করে নিন।২.খুশকি দূর করতে–
নারকেল তেলে কিন্তু প্রাকৃতিক ভাবেই অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-সেপটিক উপাদান বর্তমান।তাই আপনার মাথায় খুশকি হলে তা দূর করার জন্য নারকেল তেল কিন্তু খুব উপকারী।এই তেল আপনার স্ক্যাল্পের ইচিনেস বা অ্যাল্যার্জি হলে তা খুব তাড়াতাড়ি দূর করতে সক্ষম।
৩.চুলের গ্রোথ বাড়াতে –
চুলের গ্রোথ বাড়াতে নারকেল তেল খুব ভালোভাবে কাজ করে।নারকেল তেলে ভিটামিন ই,ভিটামিন কে,এছাড়া লুরিক অ্যাসিড ও জরুরি নিউট্রিশনস বর্তমান,যার ফলে এই তেল ব্যবহার করলে চুলের ফলিকলসগুলি হেলদি হয়ে ওঠে যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।তাই চুলের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য নারকেল তেল ব্যবহার করুন এখন থেকেই
৪.চুল পাকা রোধ করতে –
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের চুল খুব তাড়াতাড়ি সাদা হয়ে যায়।এই অকালপক্কতা নানা কারণেই হতে পারে।এই সমস্যা যদি আপনার হয়ে থাকে তাহলে তা রোধ করতেও আপনি নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৫.চুল পড়া কমাতে
চুলের পুষ্টির অভাবে চুলগুলির গোড়া হালকা হয়ে গিয়ে বা চুল ড্যামেজ হয়ে গিয়ে চুল ঝরার সমস্যা দেখা যায়।নারকেল তেল ব্যবহার করে আপনি ৯০% পর্যন্ত চুল পড়া কম করতে পারবেন।নারকেল তেলে চুলের জরুরি ভিটামিন,মিনারেলস ও নিউট্রিএন্টসগুলি বর্তমান,যা নিয়মিত ম্যাসাজের ফলে চুলের গোড়া ভেতর থেকে মজবুত করে।ফলত আপনার চুল পড়ার সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।